ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে ছয় বছরেও শেষ হয়নি প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুর নির্মাণকাজ
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দুই পাড়ের জনদুর্ভোগ কমাতে ও ঢাকার কেরাণীগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে উপজেলার চান্দহর গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর উপর সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে ছয় বছরেও শেষ হয়নি প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ওই সেতুর নির্মাণ কাজ। দু-দফা সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ করতে না পারায় নতুন ঠিকাদারও নিযুক্ত করে কর্তৃপক্ষ। তাতেও কোনো সুফল পায়নি এলাকাবাসী। তারাও কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রাখায় সেতু নির্মাণ সম্পন্ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সেতু পাড়ের বাসিন্দারা।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর ওপর ২০১৮ সালে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়’ ৩৪ কোটি ৮৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৩১৫ মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। দু-দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে না পারায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ৩৪ কোটি ৩৩ লাখ এক হাজার ২০ টাকায় নতুন করে জান্নাত কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি করে কর্তৃপক্ষ। তাদের কাজের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয় ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। নতুন চুক্তি হওয়ার পর কয়েক মাস কাজ করলেও এখনো কাজ বন্ধ রেখেছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ছয় বছরে এই ৩১৫ মিটার সেতুর দুই প্রান্তের অ্যাবাটমেন্ট ও উইং ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। অপরদিকে, পাঁচটি পিলারের মধ্যে দুটি পিলারের পায়ার ও পায়ার ক্যাপ ও একটি পিলারের শুধু পায়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘদিনেও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা একটি খেয়া নৌকা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ১০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। হাজার হাজার বিঘা জমির উৎপাদিত ফসল ঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
_1715662066.jpg)
সেতু নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় খেয়া নৌকার মাধ্যমে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত করতে হয়
চকচান্দহর গ্রামের কৃষক মহব্বত হোসেন জানান, আমাদের এই গ্রামে ভালো পরিমাণে ধান, সরিষা ও সবজির উৎপাদন হয়। সবজিগুলো ঠিক সময়ে বাজারে নিতে পারি না যার কারণে মূল্য পাই না। তাছাড়া, এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গরুর ব্যবসা করেন। প্রতি সপ্তাহে এখানকার গরু বিভিন্ন হাটে নিয়ে যেতে হয়। আগে নদীতে পানি ছিল তখন নদীতে করে বিভিন্ন হাটে যাওয়া যেত। এখন আর সেই সুযোগ নেই। একটা মাত্র খেয়া নৌকা। সারাদিন মানুষ পার হয়। তাই এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে ২০ কিলোমিটার ঘুরে হাটে যেতে হয়।
ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনির বাসিন্দা শাসসুন্নাহার। নদী পাড় হয়ে বোনের বাড়ি বেড়াতে যাবেন। খেয়া ওই পাড়ে থাকায় অপেক্ষা করছেন ১৫ মিনিটের বেশি সময়। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সেতু না থাকলে সেটার ব্যাপার আলাদা। অনেক কাজ দৃশ্যমান তবুও কী কারণে এটা হচ্ছে না সেই উত্তর কারো কাছে নেই। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের বেশি সমস্যা। আর খেয়াও মাত্র একটা।
_1715661833.jpg)
কয়েকমাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় সেতু নির্মাণ সম্পন্ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা
চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদল জানান, চান্দহর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমরা খুব বিপদে আছি এই সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে সেতুটি নির্মাণ করা হোক। নতুন ঠিকাদারও অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছে। আমরা বরাবরই ঠিকাদারকে বলেছি এই সেতুর কাজ শেষ করার জন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। সেতুটির কাজ হয়ে গেলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার বসু জানান, চান্দহর সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অসম্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। কিছু জটিলতায় এই কাজটি আটকে আছে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ডেইলি-বাংলাদেশ/আরএম/আরআই